বিডিআর বিদ্রোহ, সীমান্ত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিবেচনা
পিলখানায় গত বছর সংগঠিত বিডিআর বিদ্রোহের পর আমরা সামগ্রিকভাবে এই প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের ভিতরের যেসকল সমস্যার কথা অভিযোগ আকারে উঠে এসেছিল সেসব বিষয় সহ সর্বোপরি বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষার গুরুতর সংকট বিবেচনায় বিডিআর-এর গুরুত্ব, এর পুনর্গঠন, পোষাক পরবির্তন, ঘটনার তদন্ত ইত্যাদি নানান দিক নিয়ে কথা বলি। আমরা একজন বিডিআর জাওয়ান, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিশেবে মেজর জেনারেল (অব:) মইনুল হোসেন চৌধুরী এবং সাবেক ডিজি বিডিআর হিশেবে মেজর জেনারেল (অব:) ফজলুর রহমানের কাছ থেকে বিষয়গুলো বুঝতে চেয়েছি তারা কিভাবে এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। বিশেষত, জাওয়ানদের ক্ষোভ, অভাব-অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও গণহারে অভিযুক্ত করা এবং হেফাজতে সদস্যদের উপর নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো অগ্রহণযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে। সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উঠে এসেছে। সাম্প্রতি সীমান্তে আবারো বিএসএফের অনুপ্রবেশ, সাধারণ মানুষের উপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও সিলেট সীমান্তে ভূমিদখলের চেষ্টার আলোকে এখানে সর্বশেষ মেজর জেনারেল (অব:) ফজলুর রহমানের এই আলাপচারিতাটি পাঠকের কাছে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সম্পাদকীয়।
জহির : আমরা এর আগে চিন্তায় রৌমারী ঘটনা নিয়ে একটা সংখ্যা করেছিলাম, আপনি পেয়েছেন।
ফজলুর রহমান: জ্বী।
জহির : আমরা কথা বলতে চাচ্ছি, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে। আপনার কাছে সার্বিক বিষয়টা জানতে চাইব। আপনি নিজে যেহেতু ডিজি ছিলেন, বিডিআর-এর সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন। সেটা পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে আমাদের জিজ্ঞাসা হলো, কাঠামোগতভাবে বিডিআর কিভাবে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষ হিসাবে আমাদের এ সম্পর্কে বিশেষ ধারণা নেই। বিশেষত, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে তা কিভাবে পরিচালিত হয় সেসম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা অস্পষ্ট। মত ও পাল্টা মত রয়েছে।
ফজলুর রহমান : আমি বুঝতে পেরেছি। বিডিআর সংস্থা হিসাবে আধাসামরিক বহিনী হলেও সামরিক বাহিনীর মতো কাজ করে যুদ্ধের সময়। আর্মির কমান্ডে এসে যুদ্ধ করবে আর্মির সাথে কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে। এজন্য এটা আর্মি অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত। ফলে এর সমস্ত কিছু আমি খোলামেলা বলবো না।
জহির : তার দরকারও নেই।
ফজলুর রহমান: হ্যাঁ, দরকার নেই। সাধারণ জনগণের জন্য তথ্য আকারে যতটুকু দরকার, আমি ততটুকুই বলব। প্রথমত প্রতিষ্ঠান হিশাবে এই সংস্থার প্রধান হলেন সেক্রেটারিয়েট ডিজি। তার নিচে আছে সেক্টরগুলো। তার নিচে ব্যাটালিয়ান। ব্যাটালিয়ানের নিচে আপনার যাওয়ার দরকার নাই। কিন্তু ব্যাটালিয়ানের নিজস্ব অর্গানাইজেশান সেট আপ এর কমান্ড লেভেলে আর্মি অফিসার আছে। এখানে আর্মির যে অধস্তন র্যাঙ্ক, সর্বোচ্চে হলো বিডিআর-এর ডিএডি, মানে ডিপুটি এ্যাসিস্টান ডাইরেক্টর। এডি, এ্যাসিস্টান ডাইরেক্টর। ক্যাপ্টেন র্যাঙ্ক। মেজর র্যাঙ্ক। এই পর্যন্ত বিডিআর এর। বাকি তার উপর থেকে আর্মি অফিসার দ্বারা পরিচালিত। এই বাহিনীর মূলদায়িত্ব হচ্ছে বর্ডার রক্ষা করা। সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। পাশাপাশি পুলিশকে সাহায্য করা। যখন সামাজিক বিশৃঙ্খলা হয়, তখন সরকারকে সাহায্যের জন্য ঢাকা হয়। আর সবশেষ বিষয়টা হলো জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে তখন সরাসরি আর্মির কমান্ডে চলে আসে। কিভাবে যুদ্ধ করবে সেটা আমি আর বলছি না।
এখন আমাদের জন্য সুবিধা হলো, আমাদের ডেফথ যেহেতু কম, মিলিটারি ডেফথ যেটাকে বলা হয়। মানে সামরিক গভীরতা, এই সামরিক গভীরতা আমাদের কম। কাজেই আমাদের যুদ্ধ শুরু করতে হবে বর্ডার থেকে। কেননা ট্রেডিং ল্যান্ড ফর টাইম,(তাৎক্ষণিক হামলার মুখোমুখি না হয়ে শত্রুকে ভেতরে আসতে দিয়ে প্রস্তুতির সময় নেওয়া) এই কৌশলগত সুবিধা নেওয়ার অবকাশ আমাদের নাই। এটা বড় বড় দেশের আছে। চীনের আছে। ভারতের আছে। অর্থাৎ শত্র“কে ভিতরে ঢুকিয়ে সুবিধা মতো প্রতিরোধ করা, পর্যুদস্ত করা। কাজেই আমাদেরকে যুদ্ধ শুরু করতে হবে সীমান্ত থেকে। ফলে বিডিআরকে প্রতিষ্ঠানগতভাবে ওইরকম করেই গড়ে তোলা হয়েছে।
ভারতের ক্ষেত্রে অসুবিধা হলো তাদের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফ হলো প্রধানত পুলিশ ফোর্স। বিএসএফ-এর ক্ষেত্রে আর্মি থেকে, পুলিশ থেকে অফিসার এসে আত্মীকরণ হয় ওখানে। যেহেতু ভারত একটা বড় দেশ, বড় বাহিনী, তাদের ওখানে ওটা করা যেতে পারে। তাই এই বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় আমাদের দেশে ঐ উদ্দেশ্যে বিডিআর-এর অফিসার তৈরি করলেন আলাদা করে এবং তাদেরকে পরিচালনায় রাখলে এতে পরিচালিত হবে ঠিকই। কিন্তু বর্ডারের যে নিরাপত্তা আমরা চাই, সে বিষয়টা এই পদ্ধতি পরিপূর্ণ করতে পারবে না।
জহির : কেন পারবে না?
ফজলুর রহমান : পারবে না একারণে যে, আমরা যেটা চাই আমাদের সামরিক পদক্ষেপটা সীমান্ত থেকেই যেন শুরু হয়। ফলে বিডিআর যদি বিসিএস অফিসার দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে, সেটা আনসারের সমকক্ষ ফোর্স হবে। সেক্ষেত্রে বিডিআর-এর তো দরকার নাই। আমাদের তো আনসারও রয়েছে। সেটাকেই আমরা ওখানে নিয়োজিত করতে পারি। এই পদ্ধতিতে আর যাইহোক সীমান্ত রক্ষা হবে না।
জহির : তাহলে আপনি বলছেন যে, বিডিআর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আধাসামরিক বাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষার কাজে পুলিশী দায়িত্ব অর্থাৎ নজরদারি-টহলদারির যে প্রয়োজন এটা তারা পালন করে। এছাড়া আর একটা মৌলিক দিক হলো বিডিআর আধাসামরিক বাহিনী হলেও সেটা সামরিক বাহিনীর সহযোগী আর একটা প্রতিরক্ষা শক্তি।
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, প্রতিরক্ষা শক্তি। ফলে তাকে কোনোভাবেই দুর্বল করার সুযোগ নাই। কাজেই ইন্ডিয়ার দুর্বলতা হলো তারা পুলিশ দিয়ে আর্মি মোকাবেলা করছে। আর্মির সমকক্ষ একটা শক্তিকে মোকাবেলা করছে। ফলে তারা সবসময় চাইবে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হোক।
এত বড় একটা দেশ..., তারা পদুয়ায় মার খেয়ে গেল আমাদের কাছে। বরই বাড়িতে তারা বিডিআর-এর কাছে মার খেয়ে গেল। তাদের যে পরাজয়টা তার কারণ এটাই। একারণে বিডিআরকে নিয়ে নানা ধরণের চক্রান্ত থাকতে পারে--প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাকে দুর্বল করার জন্য।
অন্যদিকে আমার দৃষ্টিতে আমাদের এই প্রতিরক্ষা বাহিনী মানসিকভাবে গড়ে তুলতে দুইশ বছর লেগেছে। ফলে এই বাহিনীর যে গঠন এবং এদের যে গৌরবজনক ইতিহাস, বিশেষ করে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই বাহিনীর শতভাগ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এদের মধ্য থেকে দুই জন বীরশ্রেষ্ঠ আছেন। অনেক বীর বিক্রম আছেন। অনেক বীর প্রতীক আছেন।
এই যে একটা গৌরবজনক ইতিহাস, তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ তা গুরুত্বপূর্ণ। তারপরে আমার সময়কালে আমরা আক্রমণকারী শক্তি ভারতকে রৌমারীতে পরাজিত করলাম। পদুয়াতে তাদের পরাজিত করলাম। ২০০১ সালের ৮ জানুয়ারি বার্মাকে আমরা পরাজিত করলাম। এভাবে আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য তাদের ত্যাগ, সাহস ও আন্তরিকতা তুলনাহীন। এবং এর একটা ধারাবাহিকতাও রয়েছে। যেমন ধরা যাক ১৯৬৬ সালে বার্মা ও পাকিস্তানের মধ্যে নাফ নদী নিয়ে একটা চুক্তি হয়েছিল। নাফ নদীর তো অনেকগুলো শাখা-প্রশাখা আছে। ওই চুক্তিতে রয়েছে, যে দিকে নাব্যতা বাড়বে সীমানা সেদিকে সরে যাবে। ওরা করেছে কি নাফ নদীর শাখাগুলোতে বাঁধ দিয়েছে। বাঁধ দিলে স্রোতের ধারাটা আমাদের দিকে চলে আসে। সীমান্তটা আমাদের দিকে সরে এসেছে। এভাবে আমাদের ২৮শ একর জমি বার্মা দখল করে নেয়। সর্বশেষ নাফ নদী বা মূল নদীতে তারা বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এটা সফল হলে নাফ নদীসহ পুরো এলাকাটা সমুদ্রগর্ভে চলে যেত। তখন আমি বাধা দিলাম। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হলো। ওদের ২৫ হাজার ফোর্স দুইজন মেজর জেনারেলের নেতৃত্বে অর্থাৎ দুই ডিভিশন। আর আমাদের মাত্র ২৫শ সৈনিক ওই যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধে বার্মার পরাজয় ঘটে। তাদের ৬শ সৈন্য মারা যায়। তখন তাদের যে প্রেসিডেন্ট, সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল তাঙসুয়ে উনি সেদিন রেঙ্গুনের সমস্ত বিদেশী কূটনীতিকদের ডাকলেন। তিনি বললেন, ‘উই ডোন্ট ওয়ান্ট এ্যানি কনফ্রন্টেশন উইথ বাংলাদেশ’। তখন একটা চিঠি আসে ওখান থেকে। ইংরেজিতে চিঠিটার ভাষা এরকম-‘উই ইনভাইট দ্য ডেলিগেশন ফ্রম বাংলাদেশ টু ডিসকাস অল প্রোটেসটিং মেটারস বিটুইন টু কান্ট্রিজ উইদাউট এ্যানি প্রিকনডিশন।’ তখন জানেবুল হক আমাদের পলিটিক্যাল সাইড দেখতেন। জয়েন্ট সেক্রেটারি মি. হক। উনিসহ আমাদের একটা মিলিটারি ডেলিগেশন বার্মায় গেল। ওখানে বসে তারা হাতে লেখা দলিলের উপরে স্বাক্ষর করল। তখন থেকে বার্মা শান্ত ছিল। এখন আবার তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
তারপরে আসলো আপনার পদুয়া রৌমারীর ঘটনা। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের বিডিআর-এর যে বিষয়টা আপনি জানতে চাইলেন, এটা হচ্ছে একটা ভায়াবেল ফোর্স এবং কমান্ড চ্যানেল এখানে যেভাবে কাজ করে সেখানে যে ম্যাসাকারটা হয়ে গেছে, সেটা ওভাবে হওয়ার কথা নয়। এটা হওয়ার কথা নয়। যেমন আপনি ধরেন মটর সাইকেল নিয়ে ফার্মগেট থেকে আমার এখানে আসছেন। আপনি একজন সুস্থ্য মানুষ সকালে নাস্তা করেছেন, গোসল করেছেন। আপনি ফিজিক্যালী ফিট। আপনার কোনো অসুবিধা নাই। তাতে আপনার এক্সিডেন্ট হওয়ার কথা নয়। হয় আপনি ওভার স্প্রীড, ওভারটেক কিছুএকটা করেছেন, তাহলে এটা ঘটতে পারে। সাধারণ গতি ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার, আপনি যদি মটর সাইকেল চালিয়ে আসেন। কিংবা একটা গাড়ি যদি ৬০ কিলোমিটার বেগে যায় তাহলে তো এ্যাক্সিডেন্ট করার কথা নয়। ফলে বিডিআর-এর ক্ষেত্রে যদি সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলত, তাহলে এখানে তো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটার কথা নয়।
জহির : তাহলে কারণটা কি ?
ফজলুর রহমান : কারণ হিশাবে আমি যেটা খুঁজে পাই, এটা ঘটানো হয়েছে। এটা একটা সম্ভাবনা। বিভিন্নভাবে ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং ঘটানো হয়েছে। উদ্দেশ্য আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়া। ভেঙে দেওয়া। সেক্ষেত্রে আমাদের পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের যে মনোভাব দেখি, সেটা নেপালের ক্ষেত্রে হোক, ভুটানের ক্ষেত্রে হোক..., আর সিকিম তো তারা ১৯৭৫ সালে দখলই করে নিল। এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো ১৯৭৫ সালে ভারত সিকিমকে দখল করে নিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সিকিমে ভারত বিরোধী কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠে নাই। এখন আপনি যদি বাংলাদেশের দিকে গভীরভাবে তাকান, তাহলে আমাদেরকে কৃতজ্ঞ হতে বলা হচ্ছে ইন্ডিয়ার প্রতি। এবং একটা কৃতজ্ঞ জাতি হিশাবে আমাদের মধ্যে রূপান্তর আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কি সেটা? মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদেরকে সহায়তা করেছে। হ্যাঁ, সহায়তা করেছে এতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু কেন করেছে? এখন করে না কেন? কেন এখন সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের জনগণকে পাখির মতো গুলি করে মারে? আমাদের পদুয়া তারা ছেড়ে দিচ্ছে না কেন? তিন বিঘা করিডোরে যাওয়ার সময় তারা একঘণ্টা বেঁধে দিয়ে রেখেছে। আমি যখন ডিজি বিডিআর ছিলাম। আমি দিল্লিতে বসে বলেছিলাম, আমি দেশে ফিরে যাওয়ার পরেও যদি দেখি তোমরা যে এক ঘন্টার সময় বেঁধে রেখেছে..., ওটা আমাদের রাস্তার উপর দিয়ে শিলিগুড়ি চলে গেছে। এই ৫৮-৭৮ গজ রাস্তা এটা আমাদের। ওই রাস্তায় ইন্ডিয়ান যে কোনো নাগরিক যদি-পা দেয় ‘আই উইল টেক হার্ড অ্যাকশন’। তখন তারা খুব আহত বোধ করল। বলল আপনি এটা বলতে পারেন না। আপনি এটা করতে পারেন না। আমি বললাম, অবশ্যই বলতে পারি। এই জায়গাটা তো আমাদের সার্বক্ষণিকের জন্যই লিজ দেওয়া হয়েছে। উই হ্যাভ দ্য রেসিডুয়াল সভরেন্টি। আপনাদের লোকজন ২৪ ঘন্টা যাওয়া আসা করবে। আর এদিকে আপনারা দুই দিকে গেট লাগিয়ে দিয়েছেন। আমাদের লোক চলতে পারে না। তারা চলতে গেলে তাদের গুলি করে মারবেন। এটা তো হতে পারে না। তখন তারা বললো ঠিক আছে আমরা ১২ ঘণ্টার জন্য রাস্তা খুলে দিচ্ছি। এবং আমি দিল্লীতে থাকা অবস্থায় তারা ১২ ঘণ্টার জন্য রাস্তা খুলে দিয়েছিল। এখন আবার ওই ১ ঘণ্টা করে দিয়েছে। তখন সাহায্য করল (মুক্তিযুদ্ধের সময়) একদম উজাড় করে, এখন করে না কেন? একই সাথে বাংলাদেশ সৃষ্টি হলে তার উপরে আধিপত্য করা ইন্ডিয়ার লক্ষ ছিল। এটাই তার উদ্দেশ্য ছিল। তাছাড়া ’৭১ সালে আমরা যখন ৮ থেকে ৯ মাস যুদ্ধ করলাম। তখন ইন্ডিয়া কিন্তু পিছন দিক থেকে আমাদেরকে সহযোগীতা দেওয়া ছাড়া যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নি। এবং মূল যুদ্ধটা আমরা করেছি ৮ থেকে ৯ মাস। এক একটা আক্রমণ যখন আমরা পাকিস্তানি সৈন্যদের উপরে করেছি, তখন ওটা যেমন আমাদের যুদ্ধ ছিল, তেমনি ওটা একইসাথে ইন্ডিয়ার পক্ষেও আমাদের যুদ্ধ ছিল। ইন্ডিয়ার লক্ষ ছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা একটা লেভেল পর্যন্ত দুর্বল হওয়ার পরে তারা সৈন্য নামাবে। পাকিস্তানি সৈন্যদের যাতে পরাজিত করা সহজ হয়, এবং ইন্ডিয়ার সৈন্যদের রক্তক্ষয় যাতে কম হয়। সেই সময় ৩ নভেম্বরে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। নভেম্বরে মাঝামাঝিতে তারা আক্রমণ শুরু করে। আর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে তো পাকিস্তানের পরাজয় ঘটে। অর্থাৎ একটা মাস তারা যুদ্ধ করেছে। এজন্য আমি বলছি যে ৮ মাস এবং ৯ মাস। ৮ মাস যুদ্ধ করেছি আমরা এককভাবে। সে যুদ্ধ আমাদেরও ছিল। একইভাবে ভারতের হয়েও যুদ্ধ করেছি ওই সময়ে। আর একমাস তারা যুদ্ধ করেছে এবং ভারত আমাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে নি। তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে ভারত আমাদের কাছে ৯০% কৃতজ্ঞ থাকবে। আর আমরা ১০% থাকব। এখন বুঝানো হচ্ছে উল্টোটা।
জহির : হ্যাঁ, এসব তর্কগুলো তো আছেই। তবে আপনি মোটামুটিভাবে সুন্দর করে বলেছেন যে, আমাদের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনের দিক থেকে প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিডিআর এবং তাকে পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর কমান্ড ও কন্ট্রোল, একইসাথে প্রশিক্ষিত করা কেন দরকার।
কিন্তু এখানে যে প্রশ্নটা চলে আসে, বিশেষত আপনি যেটা বললেন, বিডিআর বিদ্রাহের হত্যাকাণ্ড একটা পরিকল্পনার অংশ এবং এটার ভিতর দিয়ে যে ম্যাসাকারটা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে জাওয়ানদের যে অবস্থা তা নিরসনে উপায়গুলো যদি ঠিকঠাক মতো কাজ না করে। তার ফলে তো একটা ক্ষোভ দাঁনা বাঁধতে পারে। সমস্যাগুলো সৃষ্টি হতে পারে। এখন আপনি আমাদেরকে বলুন, যদি পরিস্থিতির কারণে জাওয়ানদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তাহলে সেটা নিরসনের উপায় কি? সেটা এই ঘটনার বেলায় কাজ করেছিল কিনা?
ফজলুর রহমান : আপনাদেরকে আমি প্রথমেই একটা কথা বলেছি, যে কাঠামোর মধ্যে তারা কাজ করে সেখানে এটা ঘটবার কথা নয়। কারণটা হলো যে সোলজারটাকে আমরা সমস্ত প্রশিক্ষণ ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্যদিয়ে তৈরি করে এনে সৈনিক হিশাবে গড়ে তুলছি। সে তো আর্মি অফিসারের অধীনে প্রশিক্ষিত হচ্ছে। আর্মির যে সাইকোলজি, তার যে নীতি ধারা, তার সৌর্য-বীর্য এগুলো তো আমরা তাদের মধ্যে সঞ্চার করে দিচ্ছি ।
এখন ওই সোলজারটা বের হয়ে এসে কোনো ক্ষোভের কারণে আর্মি অফিসারকে গুলি করতে পারে। কিন্তু লাশ বিকৃত করবে কেন? তাহলে নিশ্চয় গুলি করার বাইরেও আরো কিছু লক্ষ আছে। কেউ না কেউ তাকে দিয়ে সেটা করিয়েছে। আসলে এই বিষয়টা তো স্বাভাবিক নয়।
জহির : অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে লাশ বিকৃত করার কথা নয়?
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ। ধরে নিলাম আমি, আপনি রেস্ট পান নি। আপনি ছুটি ঠিকমত পান নি। তার জন্য আপনি বিডিআর প্রধান অথবা যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারি তাদেরকে জিম্মি করতে পারেন। এটা তো একজন সৈনিকের সাধারণ যে জ্ঞান-বুদ্ধি এবং একজন অফিসারের যে জ্ঞান-বুদ্ধি, তার লেভেল তো একটা জায়গায় গিয়ে মেলে। তারপর অফিসার তো তার শিক্ষায়দীক্ষায়, তার দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আরো উপরে যায়। কিন্তু একজন সোলজার তো বোঝে আমাকে পরিচালনা করতে গেলে অফিসার লাগবে। তাকেই যদি আমি মেরে ফেলি তাহলে আমার দাবি আদায় করবে কে? তাহলে যেটা হতে পারত, সেটা তাদেরকে জিম্মি করে দরকষাকষি চলতে পারত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, জিম্মি করতে গিয়ে যে পরিকল্পনাটা হয়েছিল, তার বাইরে কিছু সোলজার এসে তাদেরকে মেরে ফেলে দিল। ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে ঠিক প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যাকাণ্ডের মতো। যা আমরা পরে জানতে পেরেছি। পরিকল্পনা ছিল যে, তাকে অপহরণ করে সেনানিবাসে নিয়ে যাবে। তারপরে হেলিকপ্টারে করে তাকে বঙ্গভবনে আনা হবে। এবং তাকে দিয়ে পরবর্তী কিছু নির্দেশনামা জারি করাবে। কিন্তু হঠাৎ করে মাঝখান থেকে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। অর্থাৎ তার মানেটা হচ্ছে এই অপহরণ পরিকল্পনার খবরটা অপর কোনো একটা দেশের গোয়েন্দা সংস্থা জেনে ফেলেছিল। তখন বাংলাদেশের ভিতর থেকে কাউকে যোগাড় করে বলা হয়েছিল তুমি এই সুযোগটা গ্রহণ কর। অপহরণ পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার ভিতর থেকে কাজটা করলে দোষটা গিয়ে পড়বে ওদের ঘাড়ে। ইন দ্য মিন টাইম ক্লিন ম্যান টুক ওভার দ্য পাওয়ার। ঠিক তেমনি এখানে বোঝানো হয়েছিল যে অফিসারদের জিম্মি করা হবে। তোমাদের এ দাবি ও দাবি পূরণ করা হবে। কিন্তু দেখা গেল জিম্মি করে তাদের যখন দরবার হল থেকে বের করা হলো তখন গাড়ির ভিতর থেকে কাপড়ে মুখ ঢাকা সোলজাররা গুলি করা শুরু করলো। এখন দেখতে হবে তারা কি আসলেই সৈনিক। নাকি ইউনিফর্ম পরা বহিরাগত কিলার। এই কিলাররা এদেশেরও হতে পারে। ভিন দেশেরও হতে পারে। যেহেতু এখন তদন্ত চলছে ফলে এ ব্যাপারে আর বেশি কথা বলা ঠিক হবে না।
জহির : আপনি আপনার আলোচনায় দুইটা দিক তুলে ধরলেন একটা হলো অফিসারদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের ব্যাপার। আর অন্যটা হলো সুযোগটা নিয়ে অন্য কেউ তাদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছে। এই দ্বিতীয় প্রশ্নে আমরা কেউ তো এখন কিছু বলতে পারব না। তবে ক্ষতির দিকে যদি আমরা আসি, আমাদের যদি সমস্যাগুলো নিরসন করতে হয়, তাহলে মৌলিক কিছু বিষয় তো আমাদের তুলে ধরতে হবে। সেদিক থেকে আমরা আপনার অভিজ্ঞতায় জানতে চাচ্ছি আসলে কাঠামোগতভাবে জাওয়ানদের কি কি ধরণের সমস্যা রয়েছে?
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, বলছি। আর্মিতে যখন আমরা আসি, যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি সেকেন্ড বাংলাদেশ ওয়ার ফোর্সে যাই। তারপরে দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আসার পরে দেখলাম ..., এই যে যেখানে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর হয়েছে, এটা সিঙ্গেল মেস ছিল ওই সময়। আমাদেরকে কমলাপুর স্টেশন থেকে রিসিভ করে ওখানে নিয়ে যাওয়া হলো। দেখি ওখানে মেসের উপরে বিছানা পেতে রাখা। তো আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা সে রকম ছিল না। মেঝেতে কোনো খাট-চৌকি নাই। ওয়েটার যে, সে বলে যে স্যার সমস্ত কিছু ইন্ডিয়ানরা নিয়া চইলা গেছে। আপনারা চিন্তা করে দেখেন একটা মেসের খাট পর্যন্ত ইন্ডিয়ানরা নিয়ে গেছে। পরে আমরা জেনেছি যে, বাংলাদেশকে সাহায্য করার নামে ওই আমলে টোটাল ৬০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ চুরি করে নিয়ে গেছে। এটা ছোট্ট একটা পয়েন্ট। তাহলে, এখানে উদ্দেশ্য কি ছিল? আমাদেরকে অর্থনৈতকিভাবে দুর্বল করা। পঙ্গু করা। সে উদ্দেশ্যের তো কোনো পরিবর্তন হয় নি। এখন প্রশ্ন হলো সৈনিকদের বিদ্রোহ নিয়ে। আমরা তখন যেসব সৈনিককে দেখেছি যেমন রোজার সময় আমি নিজেই গাইড ছিলাম। বাম দিকে গাইড হিশাবে থাকতাম। তখন প্যারেড করা হতো প্রতিদিন তিন ঘন্টা করে সকাল বেলা। রোজার দিনেও কোনো রকমের মাফ ছিল না। পিটি-প্যারেড মাফ ছিল না। এখন পিটি-প্যারেড মাফ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রোজার এক মাস। কোনো সৈনিক পিটি-প্যারেড করবে না। এবং সৈনিকদের যে রেশনটা দেওয়া হয়, খাওয়াটা দেওয়া হয়, সেটার মান যথেষ্ট ভাল। যেমন সকালে ভাজি, পুরি, চা। সকাল ১০-টা ১১-টার দিকে টি ব্রেক। সেখানেও পাকুড়া, গোলগুলাসহ আরো অনেক কিছু। তারপর দুপুরে মাছ ভাত। বিকালে চা খাওয়ান হয়। রাত্রে মাংস, ডাল, রুটি। সপ্তাহে একটা দিন মাংস ছাড়া থাকে। তো, এই যে খাওয়াটা দেওয়া হয়, আমি মনে করি আমাদের মতো গরীব দেশের জন্য ক্যালরি পরিমাণ হিশাব করে একজন সৈনিকের যা প্রয়োজন সেটাই দেওয়া হয়। এবং আমাদের অর্থনীতিক সক্ষমতা যেটা পারমিট করে, আমার মনে হয় দিস ইজ মোর দ্যান এনাফ। এবং ওইভাবে বিডিআর সদস্যদের কিন্তু দেওয়া হয়। তবে ওরা যেটা বলছিল, আমাদের ডাল ভাতের কর্মসূচি। যা দীর্ঘসময় ধরে চলে আসছে। হ্যাঁ, আমাদের বিডিআর সৈনিকদের স্বল্পতা রয়েছে। তারপর তাদের কোয়াটার গার্ডের জন্য ডিউটি করতে হয়। তার উপরে ডাল ভাত কর্মসূচি আর একটা বাড়তি দায়িত্ব। যা সাময়িক কোনো ব্যাপার ছিল না। যদি সাময়িক কোনো ব্যাপার হতো তাহলে, এটা অতখানি হতো না। দীর্ঘ দুইবছর তাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি সবই মানলাম। অভিযোগ থাকবেই। এমনকি আমেরিকান সোলজারদের কাছে যান সেখানে সৈনিকরা আত্মহত্যা করছে। অবশ্য ওই আত্মহত্যার কারণটা ভিন্ন। মানসিকভাবে তারা হয়ত বিপর্যস্ত। তারা দেখছে কেন আমি নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করতে যাব। আমাদের বাহিনীগুলোতে ওই সমস্যা নাই। সমস্যাগুলো অন্যরকম। রেস্ট পাচ্ছি না। ছুটি পাচ্ছি না। ইত্যাদি। এই বিষয়গুলোর জন্য আপনি আপনার ডিজি অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহীতাকে অপহরণ করতে পারেন। জিম্মি করতে পারেন। তাদেরকে আটকে রাখতে পারেন। কিন্তু তারা তা করে নি। তারা গুলি করে অফিসারদের হত্যা করেছে। তাদের লাশ পোড়ানো হয়েছে। বিকৃত করা হয়েছে। মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে নর্দমায় ফেলে দেওয়া হলো। সুয়ারেজের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। একজন মানুষ হিশাবে অপর মানুষের জন্য যে শ্রদ্ধাবোধ, সেটা তারা দেখায় নি। তাহলে এমন কি কারণ ঘটেছিল এখানে, যে তাদেরকে এত নৃশংস হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল? আমার মনে হয় বিডিআর সৈনিকরা এতটা নৃশংস হতে পারে না। সেই ট্রেনিং তাদের নাই। সেই প্রশিক্ষণ তাদের দেওয়া হয় না। কিন্তু এরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ বিশেষ মানুষ। আপনারা হয়ত জানেন ওই রৌমারীতে যখন যুদ্ধ হলো, তখন একজন সৈনিককে বাঁশে করে তুলে আনা হয়েছিল। ওইভাবে ছাড়া তাকে আনার কোনো উপায় ছিল না। ওই সময় যখন লাশ নিয়ে নদী পার করা হচ্ছিল, তখন দেখবেন তাকে হাতদিয়ে তুলে ধরেছিল। যাতে মৃতদেহে পানি না লাগে। লক্ষ করে দেখবেন ছবিটা। তো, এই যে একটা প্রশিক্ষিত সৈনিক, তার তো এরকম নৃশংস হওয়ার কোনো কারণ নাই।
জহির : কিন্তু দেখুন নানানভাবে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। তাদেরকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়। এসব মিলিয়ে কি এধরণের ঘটনা ঘটতে পারে না?
ফজলুর রহমান : না। এটা আপনাদেরকে বলি, আগে যেমন স্কুলে হতো যে, একটা ছেলে খারাপ কিছু করল। তাকে হাঁটুর নিচে কিছু দিয়ে নিলডাউন করে রাখল। কিংবা এক পা খাড়া করে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখল। ঠিক এ ধরণের কোনো শাস্তি বিডিআর-এ দেওয়া হয় না। যা হয় তা আইনের মধ্যেই হয়। যেমন গর্হিত কাজ করলে সে চাকুরিচ্যুত হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বর্ডারে টাকা-পয়সার লেনদেন হয়। সেখানে অনেক বিডিআর সোলজার যুক্ত থাকে। আমাদের তো প্রায় ২০০শ কোটি টাকা চোরাচালান হয়। সেটা হচ্ছে কিভাবে তাই না? এটা হয়, আমরা জানি এবং মেনেও নিয়েছি। সেক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে শাস্তি হতে পারে।
জহির : আপনি তাহলে বলছেন যে, সীমান্তে অনৈতিক কাজের জন্য শাস্তি হয়।
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, আইন-কানুনের মধ্যেই শাস্তি হয়।
জহির : কিন্তু দুর্ব্যবহারের যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে?
ফজলুর রহমান : দুর্ব্যবহার করেছে নাকি ?
জহির : কাঠামোগত পরিসরের মধ্যে দুর্ব্যবহার কি নাই?
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, দুর্ব্যবহার বলতে আমি যেমন মোটা কথা বলছিলাম খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি। দরবার হয় তো। সৈনিকদের দরবার হয়। আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে ৩০ বছর চাকুরি করে। একজন সৈনিক হয়ত বলল, সালামালায়কুম স্যার। আমার নাম্বার অমুক- অমুক স্যার। আমার আরজ আছে স্যার খাবার-দাবার নিয়ে। তারা তো মেসে থাকে। তখন আমি হয়ত বললাম নাস্তা খারাপ? নাস্তা খারাপ হলে কোন জিনিষটা খারাপ। রুটি খারাপ, না ভাজি খারাপ? তখন ওই সৈনিক ডানে-বামে তাকানো শুরু করে। আসলে তাকে একজন উস্কিয়ে নিয়ে গেছে। তুমি এই কথাটা বলবা, তারপর এক সময় সত্যটা বের হয়ে আসে। তো দরবার আমাদের আর্মিতে বিডিআরে প্রচলিত আছে। সেখানে খোলাখুলিভাবে আলোচনা হয়। এবং সেখানে যে কোনো সৈনিক, যে কোনো বিষয়ে সরাসরি ডিজিকে প্রশ্ন করতে পারে। কমান্ডিং অফিসারকে প্রশ্ন করতে পারে।
জহির : এ বিষয় নিয়েই একটা অভিযোগ আমরা শুনলাম। এটার বাস্তবতা-সত্যতা আপনিই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। এবারে দরবার করা নিয়ে কি একটা সমস্যা হয়েছিল। অন্য বিষয়টা হলো দরবারে যারা অভিয়োগ করে পরবর্তীতে তাদের ঐজন্য শাস্তি পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
ফজলুর রহমান : না, এটার কোনো ধরণের নজির নাই। এটা একটা বিকৃতিমূলক সংবাদ। কারণ দরবার একটা প্রথা। এবং আমরা সেই ঐতিহ্যটা মানি। আর সেখানে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলে কেউ তো কোনো কথা বলবে না। কেউই দরবারে কথা বলবে না। যেমন ক্রুশ্চেভ ওই যে পার্লামেন্ট বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন একজন উঠে বলল আপনি আগে কথা বলেন নি কেন? কে বলল, কে বলল, কে বলল, আর কেউ ওঠে না? তখন ক্রুশ্চেভ বলে এই জন্যই আমি সেদিন কথা বলি নি। কারণ আমি নিগৃহীত হব।
প্রশ্নটা হলো এটা তো একটা প্রথা। কোনো সোলজার যদি প্রশ্ন করে। যে কোনো প্রশ্ন হোক তাকে নিগৃহীত করার কোনো সুযোগ সেখানে নাই। কারণ তা করলে তো দরবার বন্ধ হয়ে যাবে। এর যে একটা প্রথাগত মূল্যবোধ আছে, সেটাই তো থাকবে না। ফলে এটা যারা বলছে, আমি এইখান থেকেই ষড়যন্ত্রের গন্ধটা পাই। কারণ এসব বিষয়গুলোকে অনেক বড় করে দেখা হয়েছে। যেমন আপনি ধরেন মনিকা লিউনিস্কিকে যখন অনুপ্রবেশ করানো হলো হোয়াইট হাউজে, তখন ইসরাইল ক্লিন্টনকে দিয়ে ইরাক আক্রমণ করতে প্ররোচিত করতে চেয়েছিলো।
জহির : তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন যে, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বা দরবার আছে। সেখানে এ ধরণের ক্ষোভ বা অভিযোগ পেশ করার যে বন্দোবস্ত আছে সেগুলো ঠিকঠাক মতো কাজ করলে এ ধরণের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আদৌ সেগুলো সচল ছিল কি ছিল না তদন্তের পরে তা জানা যাবে।
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, আমি সেটাই বলছি। প্রতিদিনের হাজিরা হয় এবং ওই সময়ে কিন্তু প্লাটুন ভিত্তিক, সেকশন ভিত্তিক, কোম্পানি ভিত্তিক সেটা হচ্ছে। সেখানেও কিন্তু জাওয়ানদের কথা বলার রেওয়াজ রয়েছে। সেখানে হয়ত বলে, স্যার আমার একটা আরজ আছে। আমার মায়ের অসুখ কালকে আমাকে ছুটি দিতে হবে। এভাবেও কিন্তু জিনিষগুলো চলে আসে। এটা একটা নিত্যদিনকার প্রক্রিয়া যা এ পর্যন্ত চলে আসছে। আসলে ক্ষোভ তো থাকবেই। আমাদের অর্থনীতি তো খুব বেশি বড় নয়। আমরা সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পেরেছি এমন না। এখানে হয়ত খাওয়া-পরার সমস্যা, ছুটির সমস্যা আজো রয়েছে। আমেরিকাতেও সমস্যা আছে। সে তো আরো বিশাল অর্থনীতির দেশ।
জহির : যাক এখন আমি অন্য বিষয়ে জানতে চাইব। আসলে সীমান্তে আমাদের সমস্যাগুলো কি কি? মোটাদাগে বিএসএফ-এর সাথে কি নিয়ে আমাদের ঝামেলাগুলো হয়?
ফজলুর রহমান : বিএসএফ-এর সাথে আমাদের মোটাদাগের যে ঝামেলাগুলো হয়, সেটা হলো বিএসএফ-এর মধ্যে কোনো বাঙালি সোলজার নাই। ঠিক পাকিস্তানিরা যেভাবে বাঙালি হওয়ার কারণে আমাদেরকে অবিশ্বাস করতো, তেমনি ইন্ডিয়াতেও বাঙালিদেরকে অবিশ্বাস করে। কারণ ওখানে ক্ষমতা তো অবাঙালিদের হাতে কেন্দ্রীভূত। আমি ভারতে গিয়ে দেখেছি। তাদের যে সাবসিডারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলো ওখানে বাঙালিদেরকে রেখে দিয়েছে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। তারা কিন্তু কমান্ড লেভেলে বা ক্যাম্পে নাই। ভারত সরকার যেটা করে, তাহলো, কাশ্মীরে যেসব সোলজার রয়েছে; আপনি দেখেন কাশ্মীর একটা ছোট্ট জায়গা। সেখানে ইন্ডিয়ার ছয় লাখ সৈন্য রয়েছে বিদ্রোহ দমন করবার নামে। সেখানে ওরা দেখে তাদের সামনে প্রতিপক্ষ হিশাবে মুসলমানদের। সেই সোলজারদের নিয়ে এসে দেওয়া হয় বাংলাদেশের বর্ডারে। তারা এখানে এসেও দেখে তাদের প্রতিপক্ষ হলো আবারো ওই মুসলমান। দেখেন আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে আমাদের গ্রামাঞ্চলে সাদা চামড়ার কোনো মানুষকে দেখলে বলতো ইংরেজ সাহেব। কিন্তু ইউরোপের সবাই তো আর ইংরেজ না। সেখানে অস্ট্রিয়ান আছে, কানাডিয়ান আছে। সেখানে আমেরিকান আছে। সেখানে সুইডেনের মানুষ আছে। কিন্তু সাদা চামড়ার লোক দেখলে বলা হতো ইংরেজ সাহেব। ঠিক এরকমভাবে ইন্ডিয়ান সৈন্যরা তো কাশ্মীরে গিয়ে দেখে মুসলমানের দেশ। বাংলাদেশও মুসলমানের দেশ। ফলে কাশ্মীরীরা জঙ্গি হলে, বাংলাদেশীরাই বা কেন জঙ্গি নয়। এটা একটা মস্তবড় সমস্যা। আমি তখন তাদের বলেছিলাম ভাই তোমরা বাঙালি দোভাষী রাখ ক্যাম্পের মধ্যে। এছাড়া তোমাদের সৈনিকদের বোঝাও বাংলাদেশের ইতিহাস সংস্কৃতি ও কাশ্মীরের বিষয় এক নয়। দুটো দুই ধরণের বিষয়। এটা হলো একটা সমস্যা। আর দুই নাম্বার সমস্যা হলো নো ম্যানস ল্যান্ড। এই নো ম্যানস ল্যান্ডের দেড়শ গজের এই জায়গা থেকে বাংলাদেশ শুরু। আর এই দেড়শ গজের ওখান থেকে ইন্ডিয়ার শুরু। তার মানে এই তিনশ গজের মধ্যে নো ম্যানস ল্যান্ড। কাটাতারের বেড়া হয়েছে দেশড় গজ পরে ইন্ডিয়ার দিকে। তাহলে এদিকে হলো দেড়শ গজ এই জিরো লাইন থেকে। বর্ডার লাইন এখানে। এখান থেকে দেড়শ গজ আমাদের দিকে। দেড়শ গজ ইন্ডিয়ার দিকে। এর শেষ মাথায় ইন্ডিয়া কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। এখন মনে করেন এক মওলানা সাহেবের গরু ঘাস খেতে খেতে ওখানে চলে এসেছে। ওই গরুতো আর জানে না পিলার কি? আর নো ম্যানস ল্যান্ড কি? পুরাটাই ফাঁকা জায়গা। ওই গরুটা যখন উনি আনতে গেলেন, তখন দেখা গেল বিএসএফ সদস্যারা তাকে গুলি করে মেরে ফেলে দিল। এটাই হলো সমস্যা।
জহির : ভারত তো দাবি করে চোরকারবারী...।
ফজলুর রহমান : দেখুন আমি নিজে ডিজি হিশাবে আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম, তিন বিঘা করিডোর দেখার জন্য গেলাম। ওখানে আমাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হলো। ওপাশে পেলাম একজন ফুল কর্ণেলকে, তিনি শিখ আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, ‘হোয়াই আর ইউ কিলিং দ্য আনআর্মড পিপল। দিইজ পুওর পিপল বিয়ারলি হ্যাভ এ কাপল অব বুলক। দ্য ইনোসেন্ট এনিমেল ডাজন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড বর্ডার।’ তো ও যখন গরু ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে তাকে তোমরা গুলি করে মারছ কেন? যদি সে নিয়ম ভঙ্গ করে থাকে তাহলে তাকে ধরে তোমাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ কর। তখন সে বলে, ‘হ্যাঁ স্যার ওতো আতে হ্যায় হামলোগকো মারনে কে লিয়ে’। তখন আমি বললাম তোমরা এত লোক মেরেছ আমাদের। কোনোদিন একটা হাতিয়ার তো জমা দাও নি, বল নাই, ‘উই হ্যাভ ক্যাপচারড দিজ উইপন্স ফ্রম দিস ম্যান, হি ওয়ানটেড টু কিল আওয়ার সোলজার্স’। কোনো উত্তর নেই, চুপ করে থাকে। এই হত্যাকাণ্ড ঘটে দুটো কারণে। কারণ আমরা মুসলিম। দ্বিতীয়ত তারা আমাদের ঘৃণা করে। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। এজন্য আমি যখন ডিজি বিডিআর ছিলাম। আমি প্রত্যেকটা ক্যাম্পে ওয়ারলেসের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলাম, যাতে করে মনিটর করতে পারে ইন্ডিয়া। কোনো বিএসএফ সোলজার, যে ক্যাম্প থেকে আমাদের জনগণকে হত্যা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হলো। দেখা গেল এতে করে কিলিং একদম বন্ধ হয়ে গেল।
প্রশ্নটা হলো আপনি এই বিষয়গুলো কিভাবে নেবেন? আপনি যদি মুখবুজে স্বীকার করে নেন তাহলে এক রকম, মিস্টি মুখ করে যান তাহলে একরকম। একটা কথা আছে মুখে রসগোল্লার শিরা লাগিয়ে বাইরে পড়ে থাকলে কুকুর এসে চাটবে; যখন শিরা শেষ হয়ে যাবে তখন মাংশ ছিড়ে খাবে। কিছুক্ষণ পরে দেখবেন কঙ্কাল ছাড়া আর কিছু নাই।
জহির : এটা ছাড়া আর সমস্যাগুলো কি?
ফজলুর রহমান : যেমন ধরেন আমাদের সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা এখনো মুক্ত হয় নি। অচিহ্নিত অবস্থায় আছে। পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা চিহ্নিত হয়েছে। তাছাড়া, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির বাস্তবায়ন ইন্ডিয়া করছে না। করিডোরগুলোর সমস্যা রয়ে গেছে। পদুয়া থেকে আমরা উড্রো হয়ে চলে এসেছি। কথা থাকলেও তারা সেখান থেকে যায় নি। তারপরে আপনার বর্ডার সংলগ্ন এলাকাগুলোয় ওরা ফেন্সিডিলের কারখানা তৈরি করেছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারা আমাদের দেশে সেটা পাচার করছে। যাতে করে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে যেন ধ্বংস করে দেওয়া যায়।
জহির : এক্ষেত্রে বিডিআর-এর পক্ষ থেকে কি ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ফজলুর রহমান : চেষ্টা করা হয় তাদেরকে ধরার জন্য। যাতে আমাদের দেশে না আসতে পারে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে থাকি। যাতে তারা-এগুলো বন্ধ করে দেয়। আমরা তো তাদের ফেন্সিডিল তৈরির লোকেশনগুলো জানি। বর্ডারের দশ কিলোমিটরের মধ্যে তাদের কাজকারবার। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের আচরণ কোনোভাবেই বন্ধুসুলভ নয়। আর সব থেকে বড় সমস্যা হলো তারা মিথ্যাবাদী। মিথ্যাবাদীদের সাথে আপনি পারবেন কিভাবে? আজ সারা বিশ্বে প্যালেস্টাইন ও আমাদের সীমান্ত ছাড়া আর কোথাও এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যার রেকর্ড কিন্তু নাই।
জহির : এবার অন্য প্রশ্নে যাওয়া থাক। বিডিআর-এর পিলখানা ঘটনার পর পুরা বিডিআর প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করা দরকার বলে অনেকে মনে করছেন। আবার অনেকে নাম পরিবর্তনের কথা বলছে। এসম্পর্কে আপনার মতামত কি ?
ফজলুর রহমান : দেখুন এ প্রসঙ্গে উত্তর দেওয়ার আগে আমি দুই একটা বিষয় তুলে ধরবো। সেটা হলো লাশগুলোকে বিকৃত করা হয়েছে। অসম্মানিত করা হয়েছে। এটা আমাকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে, যখন ওদের মৃতদেহগুলো, ১৮টি ডেডবডি ওরা নিয়ে যেতে পারে নি রৌমারি থেকে। তখন ভারত আমাদেরকে অভিযুক্ত করেছিল যে আমরা লাশকে বিকৃত করেছি। আমরা তার জবাবে বলেছিলাম, ভাই তোমরা গোলাগুলি বন্ধ কর নি বলে লাশগুলো আমরা সময়মত আনতে পারি নি। ফলে গরমে ফুলে গেছে। তাছাড়া, প্রত্যেকের তো গুলি লেগেছে। কারো নাড়ি-ভুড়ি বের হয়ে গেছে। কারো মগজ বের হয়ে গেছে। ফলে আমরা ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছি ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য। এবং কোনো ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কোনো লাশ বিকৃতির প্রশ্ন উত্থাপন হয় নি। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের পরে আর্মি অফিসারেদের লাশ যে বিকৃত করা হলো আমাকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে এটা পূর্বপরিকল্পিত প্রতিশোধ কিনা। এভাবে লাশগুলোকে বিকৃত করে পুরানো ক্ষোভকে প্রশমিত করা হয়েছে কিনা।
জহির : তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন লাশ বিকৃত করা, গণকবর দেওয়া ইত্যাদি প্রশ্নে করো না কারো প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করতে পারে।
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, করতে পারে। যেহেতু এখন তদন্ত চলছে ফলে এব্যাপারে বিস্তারিত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
জহির : কিন্তু বিডিআর-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাম পরিবর্তনের যে প্রশ্ন আসছে সে সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
ফজলুর রহমান : পুনর্গঠনের প্রশ্নটাকে আমি এভাবে দেখি, বিডিআর তো পুনর্গঠিত অবস্থায় আছে। এটা ২০০ বছর ধরে গড়ে তোলা একটা সংস্থা।
জহির : তাহলে পলিসি লেভেলে কি কিছু যুক্ত করতে চাচ্ছে, কিছু কি বাদ দিতে চাচ্ছে ?
ফজলুর রহমান : আমার মনে হয় এখানে যে জিনিষটা কাজ করছে। আমি তো অফিসারদের সাথে কথা বলেছি, সেখানে কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন আমার জানা যে ইতিহাস, সেখানে এত অল্প সময়ে এত অফিসারকে মেরে ফেলেছে তাদের সোলজাররা এই দৃষ্টান্ত কিন্তু নাই। পৃথিবীর ইতিহাসে নাই। তাদের দেহগুলোকে বিকৃত করা, লুটপাট করা, এটা সোলজারদের কাজ হতে পারে না। এটা অসৈনিকসুলভ কাজ। সন্ত্রাসি কাজ। প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার যে কাজ, এই কাজ সেই পর্যায়ে পড়ে। একটা সৈনিকের দ্বারা একাজ হতে পারে না। সৈনিকরা সামনাসামনি গুলি করে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তারপর সে যখন পড়ে গেল, মারা গেল সেখানেই কিন্তু ঘটনার শেষ। আপনি কি জানেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক সৈনিক অপর এক সৈনিককে গুলি করেছে। এবং সেই গুলি করা সৈনিককে তার পানির বোতল থেকে পানি খাওয়াচ্ছে। এটাই হলো সৈনিকতার শিক্ষা। এই শিক্ষাই আমরা তাদের দিয়ে থাকি। এটা হয়ত কোনো অনুপ্রবেশকারী বাইরে থেকে এসে সৈনিকের পোশাক পরে এ কাজ করে থাকতে পারে। যার জন্য তাদের মুখ ঢাকতে হয়েছে। ফলে বিডিআর পুনর্গঠনের প্রশ্নটা সম্ভবত একটা আবেগ থেকে এসেছে। নামে কি আসে যায় বলুন? নাম কি দোষ করেছে? বিডিআর নামটা কি দোষ করেছে। পাকিস্তান আমলে সংস্থার নাম ইপিআর ছিল। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু এটার নাম বিডিআর করেছেন। তো নামে কি আসে যায়? পোষাকই বা কি ক্ষতি করল?
জহির : দেখুন বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন ফলে আমরা স্পষ্ট নই কারা কিভাবে ঘটনার সাথে যুক্ত। কিন্তু বর্তমানে বিডিআর ডিজি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এই পোশাকে রক্তের দাগ’। পোশাক তো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, ব্যক্তিকে করে না। তাহলে তিনি কি বলতে চাচ্ছেন- এই ঘটনার জন্য পুরা প্রতিষ্ঠানই দায়ী।
ফজলুর রহমান : তা কি করে হবে? ধরেন এই সংস্থায় যতগুলো সোলজার আছে, মানে প্রায় ৪৫ হাজার সোলজার রয়েছে। এই ৪৫ হাজার সোলজারই কি এতে অংশ নিয়েছে? মূলত এই কথাটা ইমোশনাল অবস্থা থেকে এসেছে। আমি সেটাকে মূল্য দেই। এতজন অফিসার মারা গেছেন। তারা সবাই প্রতিভাবান।
জহির : সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তির আবেগাপ্লুত হওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, এটা ঠিকই আছে। আমরা এসময় অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে অনেক কথা বলতে শুনেছি। যার মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে বাচাল হিসাবে আখ্যায়ীতও হয়েছেন। যেমন ধরেন আমরা না হয় পোষাক পরিবর্তন করলাম। আমি আপনার প্রশ্নে ফিরে যাচ্ছি। আলোচিত ঘটনার কারণে আমরা যদি বিডিআর-এর নাম ও পোষাক পরিবর্তন করে দেই, তাহলে এটা তো গৌরববৃদ্ধি করবেই না। বরং এক ধরণের অপরাধবোধ তাদের মধ্যে কাজ করবে। সাধারণ জাওয়ানরা মনে করবে যে, আমাদের সঙ্গি-সাথীরা একটা গর্হিত কাজ করেছিল বলেই আজ অন্য একটা পোষাক আমাকে পরতে হয়েছে। আমাদের সংস্থার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। একটা কথা, আপনাকে আমি যদি বলি, আপনাকে ৫০ লক্ষ টাকা দিব আপনি হিলট্রাকে গিয়ে জীবন দিয়ে দেন। আপনি নিশ্চয় তা দিবেন না। লাইফ ক্যানট বি কমপেনসেটেড উইথ মানি। এটা হয় না, লাইফ ক্যানট বি কস্ট ইফেকটিভ। কাজেই একজন সোলজার যখন হিলট্রাকে গিয়ে মারা যাচ্ছে, তখন অফিসার কিন্তু তাকে বলে না এজন্য বোনাস বাড়িয়ে দেওয়া হবে। নো, সে দেশপ্রেমের জন্যই মারা যাচ্ছে। তাই না? তো এখানে আপনি তার পোষাক পরিবর্তন করে দিলেন। কি গৌরব সে পেল? কি দিলাম আমরা তাকে? কিছু সোলজার অপরাধ করেছিল বিধায় তার পোষাক পরিবর্তন হয়ে গেল! কিছু সোলজার নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ছিল বলে সংস্থার নামটা পাল্টে গেল! এইটা তো তাদেরকে তাড়া করে ফিরবে। তাদের জন্য অগৌরবের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে ফেলবে। সাধারণ মানুষও ধিক্কার দিতে পারে.., তোমাদের পোশাক পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে কারণ তোমরা নিজের অফিসার হত্যা করেছ। কাজেই আমি মনে করি এখন গণতান্ত্রিক সরকার রয়েছে ক্ষমতায়। দেশের জনগণের মনোভাবকে বিচারে নিতে হবে। শুধু যে আর্মি অফিসারদের আবেগকে বিবেচনা করতে হবে, তা নয়। জনগণ কি রাস্তায় নেমেছে, তারা কি মিছিল করছে যে, বিডিআর-এর পোষাক পরিবর্তন করে দাও। সংস্থার নাম বদলে দাও। তারা তো অদ্যবধি ওই পোষাক পরেই বর্ডার ডিউটি করছে। তাছাড়া পোষাক পরিবর্তন করার এখতিয়ার তো ডিজির আওতায় পড়ে না। ডিজি প্রস্তাব পাঠাবে সরকার সেটা পরিবর্তন করতে পারে অথবা নাও পারে। যেহেতু সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় নি।
জহির: আমরা দেখছি যে বিডিআর ডিজি পোষাক পরছেন না...
ফজলুর রহমান : ব্যক্তি বলে সোলজারদের কোনো কিছু থাকতে পারে না। আপনি আইডেন্টিফাইড উইথ গ্রুপ অর্গানাইজেশান। তো, প্রশ্নটা হচ্ছে আপনি আইডেন্টিফাইড হবেন আপনার অর্গানাইজেশানের মাধ্যমে। ফলে অর্গানাইজেশানের তো এখনও পোষাক পরিবর্তন হয় নি। ফলে ওই পোষাক তার পরা উচিত বলে আমি মনে করি।
জহির : না পারাটা কি শৃঙ্খলা ভঙ্গ নয় ?
ফজলুর রহমান : শৃঙ্খলার পরিপন্থী তো বটেই। কারণ তিনি এটা বলতে পারেন না। তিনি ডিজি বিডিআর হলেও একজন সোলজার। তাকেও শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয় বা হবে। কিন্তু কথাটা হলো আপনি পোষাক পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন। নাম পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন। এটা কি গৌরবের কাজ হবে? যদি না হয় তাহলে আমাদের শত্র“রা যা চাইছে তাই তো আমরা করলাম।
জহির : প্রসঙ্গ ধরে আর একটি প্রশ্নে যাওয়া যেতে পারে। সম্প্রতি উনি ভারত গিয়েছিলেন। এবং বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন বিএসএফ আমাদের বিডিআর পুনর্গঠনে সহযোগীতা করতে চায়। তো পুনর্গঠন এবং বিএসএফ-এর সহযোগীতা এই দুটো বিষয়কে আপনি কিভাবে দেখেন?
ফজলুর রহমান : আমি আপনার প্রশ্নের জবাবে একটা কথাই বলবো টাটা গাড়ীতে চড়ে আমরা ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এরকম, টাটা গাড়ি ইন্ডিয়া সাপ্লাই দিয়েছে আমাদেরকে। আমরা ওই গাড়িতে চড়ে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। ওই গাড়ির সমস্ত ম্যাকানিজম ইন্ডিয়া ভাল জানে।
জহির : তাহলে পুনর্গঠনের অর্থ কি দাঁড়াতে পারে। আমরা সংস্থাটিকে আরো শক্তিশালী করতে চাচ্ছি না দুর্বল করে দিতে চাইছি।
ফজলুর রহমান : এখন বর্ডারে যাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। তারাই যদি আমাদের বাহিনী পুনর্গঠন করে দেয় তাহলে, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। এই প্রশ্নে আমি আর একটু বলতে চাই।
বিশ্বের যারা উন্নত দেশ সেসব দেশে যে ধরণের সামরিক ইন্সিটিউশন আছে। আমাদের তার সবকিছুই আছে। এবং আমাদের সেনাবাহিনী পিসমিশনে এক নাম্বার অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে ইন্ডিয়া প্রতিযোগীতায় আমাদের সাথে পারে নি। বিশ্বে আমরাই এক নাম্বারে রয়েছি।
জহির : দেখুন এ বিষয়ে কিন্তু সমালোচনাও রয়েছে। যেমন আমাদের এত বেশি সংখ্যক সেনাসদস্য ও অফিসার ইউএন মিশনে কাজ করার ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর (National Army) যে চরিত্র থাকার কথা ছিল তা নাই। যা আমরা ১/১১-এর সময় প্রত্যক্ষ করেছি। ফলে এ ধরণের সমস্যাও কিন্তু তৈরি করেছে।
ফজলুর রহমান : না, এই সমস্যা তো তৈরি করেছি আমরাই। আমি আমাদের সেনাবাহিনীর দক্ষতার দিকটা তুলে ধরলাম। আমাদের যে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ এবং স্টাফ কলেজ রয়েছে সেখানে ইন্ডিয়ান সোলজার ও অফিসাররা এসে ট্রেনিং করছে। আমরা তো আমেরিকার মানের ট্রেনিং দিচ্ছি। আমাদের তো একটা সুনাম রয়েছে। এখন ধরেন তারা সুনাম হিসাবে বলছে তোমাদের যদি কোনো কৌশলগত সহায়তা লাগে আমরা দেব। কিন্তু এটা অনুসরণীয় নয়। ধন্যবাদ বাচক। কিন্তু আমাদের যে জ্ঞান-বুদ্ধি আছে সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
দ্বিতীয়ত, আমাদের এসব বাহিনীকে আরো দক্ষ করার জন্য টেকনোলজিক্যালী আরো উন্নত করা উচিৎ। এটার ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশানকে ঢেলে সাজানো উচিৎ। তাদের কার্যক্ষমতা আরো বাড়ানো উচিৎ। এবং আমি বলবো বাহিনী হিশাবে বিডিআরকে আরো বেশি করে আর্মির তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা উচিৎ। যেহেতু আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে এই বাহিনীর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যার অপ্রতুলতা রয়েছে। ফলে এই বাহিনীটাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসা উচিৎ।
জহির : সেটা করা হলে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করা হবে না?
ফজলুর রহমান : না সেটা আমরা অন্যভাবেও করতে পারব।
জহির : এবার অন্য একটি বিষয়ে আপনি যদি সংক্ষেপে কিছু বলেন। বিষয়টি হলো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল কিছু বুদ্ধিজীবীরা ইদানিং কালে দাবি করছে যে আমাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে ইসলামিস্টরা ঢুকে গেছে। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি? বিশেষত এ ধরণের প্রচারণা আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় রাজনীতিসহ আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপরে কি মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে?
ফজলুর রহমান : আপনাদের জানা দরকার আমাদের প্রত্যেকটা ইউনিটে, বিডিআর এবং আর্মি--আমি অন্যসব সংস্থার কথা বলছি না, প্রত্যেকটা ইউনিটে একজন টাইটেল পাশ মওলানা আছে। একজন মওলানাকে আমরা ধর্মীয় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছি। উনি মাদ্রাসা পাশ। বিশেষ, উনারা আলিয়া মাদ্রাসা পাশ। এদেরকে আরটি বলা হয়। এবং খুব সম্মানের সাথে তাদেরকে গ্রহণ করা হয়। সকালে আমাদের যে পিটিটা শুরু হয়, শরীরচর্চা শুরু কোরআনের আয়ত পাঠ করে। তাছাড়া, যত রকমের ধর্মীয় দিবস রয়েছে, যেমন রোজা-ফাতেহা ইয়াজদাহম, শবে কদর, শবে বরাত ইত্যাদি দিবসগুলো আমরা পূর্ণউদ্দিপনা ও সম্মানের সাথে পালন করি। এবং সুস্থ্য ধারার ধর্মীয় মোটিভেশন দ্বারা সৈনিকদের শিক্ষা দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতি বৃহস্পতিবার একটা সময়কাল মওলানা সাহেব সমস্ত সৈনিকদের নিয়ে বসেন। তিনি সৈনিকদের দ্বীনের শিক্ষা দেন। ফলে এর মধ্যে জঙ্গি ঢুকবে কি করে?
জহির : আপনাদের এই মোটিভেশন ওয়ার্কটাকেই যদি সমস্যা আকারে চিহ্নিত করা হয়?
ফজলুর রহমান : কেন এতে সমস্যা হবে কি করে? আমি কিন্তু তাদের অভিযোগের জবাবেই কথাগুলো বললাম। সুস্থ্য ধারায় ইসলামের দ্বীনি শিক্ষা কি সমস্যাজনক? প্রতিদিন যেখানে সকাল-সন্ধ্যায় ইসলামের শিক্ষা বহমান, সেখানে জঙ্গিদের ঢুকতে হলে তো তাদের সৈনিক হতে হবে তাই না। তাছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নাজাম পড়ানোর চেষ্টা করা হয়। কোনো জোরজবরদস্তি করে নয়। সেখানে দোয়া-খায়ের করানো হচ্ছে। এবং সমস্ত প্রক্রিয়াটির যেখানে মনিটরিং করা হচ্ছে। সেখানে জঙ্গিবাদ ঢুকবে কি করে। মূলত: বর্তমানে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষাপট হলো--সেই হলো টেরোরিস্ট যে তাদের অধীনতা, জবরদস্তি ও আগ্রাসনের স্বীকার হলে চুপ থাকতে অস্বীকার করে, ওকেই টেরোরিস্ট বলা হয়। অর্থাৎ পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী যে অর্থনীতি তার একটা দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। অল্প কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, পাকামালের বাজার আর কাঁচামালের খামার। বাংলাদেশ হবে পাকা মালের বাজার। মানে আমেরিকা থেকে ইওরোপ থেকে পাকামাল বা তাদের উৎপাদিত শিল্প পণ্য আমাদের দেশে আসবে। আমরা সেটা আমদানী করতে বাধ্য হব। আর আমাদের দেশটা হবে ওই শিল্প পণ্য উৎপাদন করার কাঁচামালের খামার। অর্থাৎ আমরা কাঁচামাল উৎপাদন করে রফতানি করবো। যেদিন থেকে আপনি এই পদ্ধতি মানতে চাইবেন না, সেটা করতে চাইবেন না অর্থাৎ আপনি এর শিকার হতে অস্বীকার করবেন আপনাকে দেখিয়ে বলবে ‘লুক এট হিম, হি ইজ এ টেরোরিস্ট’। তখন বলা হবে বাংলাদেশের প্রতিটি কোনায় তালেবানরা ছেয়ে গেছে। এদেশের অধিকাংশ মানুষ তালেবানপন্থী হয়ে গেছে। এই হলো পরিস্থিতি।
জহির : তাহলে, এখন যে সমস্যাগুলো আমাদের সামনে রয়েছে, বিশেষত পিলখানার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগামী দিনের তদন্তের প্রশ্নটি রয়েছে। যদিও তদন্তের আইনি দিকগুলো আমাদের সামনে ততটা পরিষ্কার নয়। এসব কিছু মিলিয়ে আপনার প্রস্তাবনাগুলো কি? বিশেষত, আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে আমরা কিভাবে আরো শক্তিশালী করতে পারি।
ফজলুর রহমান : আমি বলি কি এটা আমাদের একটা জাতীয় সমস্যা। বড় ধরণের জাতীয় সমস্যা। কারণ আমাদের ব্যবস্থার উপরে আঘাত পড়েছে। যারা আমাদের শত্র“ তারা চায় যে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়–ক। ফলে এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদেরকে দেখতে হবে। এবং সমস্যা সমাধানের পথ আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে বের করতে হবে। এখানে আত্মতুষ্টির যেমন সুযোগ নাই, তেমনি পাশ কটিয়ে যাওয়ারও কোনো অবকাশ নাই। সংস্থা হিসাবে বিডিআর-এ যা ঘটেছে, একই ঘটনা পুলিশ বিভাগে ঘটতে পারে। আনসারে ঘটতে পারে। আর্মিতে ঘটতে পারে। নেভিতে ঘটতে পারে। এয়ারফোর্সেও ঘটতে পারে। কাজেই এটার যদি আমরা সমাধান চাই, তাহলে, বিডিআর ঘটনার তদন্তকে নির্মোহভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে করতে হবে। যাতে মূল কারণগুলো আমরা বুঝতে পারি, জানতে পারি, তার স্বরূপ উন্মোচন করতে পারি। একইভাবে ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরণের ঘটনা না ঘটে তার জন্য সমস্ত ধরণের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। তা না হলে আমরা আমাদের জাতীয় পর্যায়ের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব না। যদিও এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেকদিন সময় লাগবে।
জহির : এক্ষেত্রে কি আপনার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে?
ফজলুর রহমান : না আমি এখানে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দিতে চাই না। কারণ এখন যারা তদন্ত করছেন তারা সবাই বিজ্ঞ ব্যক্তি। নিঃসন্দেহে তারা বিষয়গুলো নিয়ে ভেবেছেন। তবে আমার দিক থেকে তাদের কাছে একটাই আহ্বান থাকবে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির উপরে উঠে একটা নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হবেন। কারণ সরকার আসবে যাবে। সংস্থা হিসাবে বিডিআর কিন্তু থেকে যাবে। কাজেই ঘটনাটিকে জাতীয় সমস্যা হিসাবে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
আর একটা জিনিষ আমি বলবো কোনোভাবেই কিন্তু শত্রুকে জয়ী হতে দেওয়া যাবে না।
জহির : আপনি যে আশা-আকাক্সক্ষার কথা বলছেন, শত্রুকে জয়ী হতে দেওয়া যাবে না। এরকম কোনো বাস্তবতা রয়েছে কি?
ফজলুর রহমান : এ ব্যাপারে আমি এখন বিস্তারিত মন্তব্য করতে চাই না, যেহেতু তদন্ত চলছে আমি প্রাক্তন ডিজি বিডিআর হিসাবে একবার তাদের সাথে বসেছিলাম। আমি ছাড়া আরো যারা ডিজি বিডিআর ছিলেন তারাও বক্তব্য রেখেছিলেন। সরকার যদি আমাদের কাছে সহযোগীতা চান আমরা সেটা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আরো বসতে রাজি আছি। আমরা চাই ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক। যারা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে, যারা প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারী তাদের যাতে আমরা চিনতে পারি এবং ভবিষ্যতে যাতে আগাম ব্যবস্থা নিতে পারি সে ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
জহির : হ্যাঁ, বিচারে যেমন শাস্তির বিষয় রয়েছে, তেমনি তদন্তকালীন সময়ে বেশ কিছু বিডিআর সদস্যের নানান নির্যাতনের মধ্য দিয়ে মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগও আছে। অসংখ্য সদস্যদের তাদের পরিবারের সাথে কোনো রকমের যোগাযোগ নাই। অনেকের সম্বন্ধে আশঙ্কা করা হচ্ছে তারা বেঁচে আছে কি না, কয়েক ধাপে নিখোঁজ বিডিআর জাওয়ান-এর সংখ্যা কমানো হচ্ছে। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, সব কিছু মিলিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিতো সৃষ্টি হচ্ছে। ৮/৯[সর্বশেষ ১৯] জনের মতো ইতোমধ্যে মারা গেছে। এক্ষেত্রে কি তদন্ত হলো সেটা আমি জানি না। এবং তাদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট কি আসছে সেটাও আমি জানি না। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসবে। এখন অপেক্ষা করা আমাদের উচিত।
জহির : তবে সামাজিকভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এবং নিরাপত্তাহীনতা কিন্তু তৈরি হচ্ছে। বিশেষত বিডিআর জাওয়ানদের পরিবার যারা, প্রায় ৬০ হাজার পরিবার। তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও মানসিক যে সংকট এটাকে তো এখনই তুলে ধরা দরকার।
ফজলুর রহমান : আমার মনে হয় এসমস্ত বিষয়কে সামনে আনা উচিত। এবং যেসব শঙ্কা বা আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তার যাতে দ্রুত নিরসন হয় সেদিকগুলো বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সরকারেরই দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ। বিশেষত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু হতে হবে। বিচার হতে হবে, শাস্তি হতে হবে। এইকসাথে মানবাধিকার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এবং এটাই নীতির কথা, সমাজের কথা, ধর্মের কথা। যেমন ইসলামে রয়েছে আপনি যখন কোনো দেশ আক্রমণ করবেন, তখন ওই দেশের কোনো মহিলা-শিশু বৃদ্ধকে অবমাননা করার কোনো অধিকার আপনার নাই। খেতের ফসল জ্বালিয়ে দেওয়া বা নষ্ট করার অধিকার নাই। যে পরিস্থিতি মানুষের জীবনকে বিঘ্নিত করে সে ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অধিকার নাই। এবং মানুষের মন জয় করার জন্য চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। আসলে মানুষ নিগৃহীত হয় বলেই তো নতুন শক্তিকে বা ন্যায় পরায়ণতাকে আহ্বান করে। এসব কিছু মাথায় রেখে আমি বলবো, বিডিআর-এর বিষয়টিতে এই দিকগুলো খবুই জরুরি।
জহির : আপনার আলোচনা ধরে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হলো যে, আমাদের শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যে প্রশিক্ষণ, সেখানে যে মানসিকতা, মানবাধিকার ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া হয় বলে আপনি দাবি করেছেন, সেটা নিশ্চয় দেওয়া হয়। তারপরেও আমরা নানা সময়ে মানবাধিকার পরিপন্থী ঘটনাগুলো ঘটতে দেখি। যেমন আমরা জরুরি অবস্থার সময়ও নানা ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। এসব ঘটনাগুলো যখন ঘটে তার প্রতিকারের জন্য আমরা কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকি কিনা? কিংবা অভিযোগ আকারে এসব বিষয় যখন আসছে...।
ফজলুর রহমান : আপনার বক্তব্য আমি বুঝেছি। আমার কথাটা হলো একটা লোককে গুলি করলো। গুলি খেয়ে সে পড়ে গেল। তারপর তার লাশটা বিকৃত করতে যায় নি। আমার প্রশ্নটা হলো সেখানে। যখন তাকে টুকরো টুকরো কেটে বিকৃত করা হলো। তখন বুঝতে হবে এই কাজটা তার বাইরে গিয়ে সে করেছে--তার শিক্ষার বাইরে গিয়ে সে করেছে। র্যাবের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে,... আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়, যখন একজন আর্মির সৈনিক, আর্মির অফিসার একটা নিরস্ত্র লোককে মারবে গুলি করে--সেদিন তার সৈনিকের মর্যাদা চলে যাবে। এজন্য চোর ধরার দায়িত্ব পুলিশের, আর্মির নয়। ক্যান্টনমেন্টে চুরি হলেও তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের। আর্মির নয়।
নেসার : বিডিআর প্রসঙ্গ ধরে আরো কিছু প্রশ্ন রয়েছে।
ফজলুর রহমান : জ্বী বলেন।
নেসার : বাংলাদেশে এপর্যন্ত আমরা বেশ কয়েকবার সামরিক শাসন আসতে দেখেছি। এখন বা সেই সময়গুলোতে সামরিক সরকারের নির্দেশে বিডিআরকে আমরা আর্মির সহযোগীতা করতে দেখি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগতভাবে যদি বিডিআর-এর অবস্থান পৃথক থাকে তাহলে, ওই সময় সে সামরিক শাসনের অধীনে কাজ করতে অস্বীকারও করতে পারে। অথবা সামরিক শাসন প্রতিরোধ করার জন্য সে রাস্তায়ও নামতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিডিআর সংস্থাটা সামরিকবাহিনীর কমান্ডে থাকায় তাদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। ফলে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি অনেক নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দিয়ে সামরিক বাহিনী যখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে, তখন বিডিআর তার কাঠামোগত কারণে সেই কাজে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হয়। তো এসব বিষয়গুলোকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ফজলুর রহমান : আমি ঠিক যেভাবে দেখি, পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য বিডিআর যায়। আমি এভাবেই দেখি। আমি যখন ডিজি বিডিআর ছিলাম। তখন ১৬ মাসে ৪৭ বার পুলিশকে সাহায্য করেছে তারা। এই ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে। ওখানে শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে ওই জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিডিআর যায়। এভাবে ৪৭ বার তারা গিয়েছে। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনেক মিটিং করেছি। বলেছি আপনি বিডিআর-এর বাজেট বাড়াচ্ছেন না। পুলিশের বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ সে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। আমরা তাকে ৪৭ বার সহযোগীতা দিয়েছি। বাজেট তো বিডিআর-এরও বাড়াতে হবে। বিডিআরকে নিয়োগ করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
নেসার: দেখুন আমি সামরিক শাসন বা সামরিক সরকারের সময়কালের কথা বলছি।
ফজলুর রহমান : সামরিক শাসন মানে মার্শাল ’ল?
জহির : মানে সামরিক শাসন যখন জারি করে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।
ফজলুর রহমান : তখন তো শুধু বিডিআর নয়। পুলিশকেও তো ব্যবহার করে।
নেসার : যদি কাঠামোগতভাবে পৃথক থাকে ...।
ফজলুর রহমান : বুঝেছি। আসলে ওটা তো প্রতিরোধ করতে পারবে না। বিডিআর-এর বর্তমান যে অবস্থা আর্মির কমান্ডে থাকার পরেও সেখানে ১০ মিনিটও তারা টিকবে না। আর্মির যে শক্তি এর বাইরে আমি কিছু বলব না। সেখানে ১০ মিনিটও তারা টিকবে না।
নেসার : দেখুন আমাদের দেশের আর্মির তো যুদ্ধের কোনোই অভিজ্ঞতা নেই। যতটুকু আছে সেটা বিডিআর এর।
ফজলুর রহমান : আমি মুলত আর্মির যে শক্তি সেই শক্তিটার কথা বলছি।
নেসার : শুধুমাত্র শক্তি দ্বারাই সবকিছু নির্ধারণ হয়ে যাবে?
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ। আমি যে শক্তিটার কথা বলছি সেটাকে মোকাবেলা করে ১০ মিনিটও তারা টিকতে পারবে না।
নেসার : সে কথা যদি বলেন, তাহলে, অনেকেই তো দাবি করেন বাংলাদেশে সেনাবাহিনী পোষার কোনো দরকার নেই। কারণ কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সে। যদি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের কথা ধরা হয়, তাহলে, ভারতের আর্মির যে শক্তি তার কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১০ মিনিটও টিকবে না।
ফলজুল রহমান : হ্যাঁ, আপনার প্রশ্নের একটা জবাব দেওয়া দরকার। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি আর্মির উপরে নির্ভরশীল নয়। এটা নেভির উপরে নির্ভরশীল নয়। এয়ারফোর্সের উপরে নির্ভরশীল নয়। বিডিআর-এর উপর নির্ভরশীল নয়। এটা নির্ভরশীল আপনার উপরে, আমার উপরে।
আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন কেন? এর কারণ হলো পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি, এতটাই ইউনিক যে, এর উদাহরণ আর কোথাও নাই। প্রত্যেকটা মুসলমান দেশের সাথে আর একটা মুসলমান দেশের সীমান্ত রয়েছে। আপনি ভৌগলিকভাবে দেখেন মালেশিয়ার সাথে ইন্দোনেশিয়ার রয়েছে। আপনি পাকিস্তানের দিকে তাকান সেখানে সেটা দেখতে পাবেন। আমরাই একমাত্র দেশ যার তিন দিকে ইন্ডিয়া। একদিকে বার্মা। কিন্তু আমাদেরকে আল্লা এমন এক জাতীরূপে গঠন করেছে ১৫ কোটির মধ্যে সাড়ে ১৪ কোটি মানুষ বাঙালি। হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ-খ্রীস্টান মিলিয়ে। আমি ধর্মীয় বিভাজনে বিশ্বাস করি না। সবাই এদেশের নাগরিক। তারপরেও যদি ধর্মীয়ভাবে বিশ্লেষণ করেন। তাহলে, দেখা যাবে ১২ কোটি মানুষ মুসলমান। তার ৯৯ ভাগ আবার সুন্নি। অল্প কয়েকজন আহমদিয়া এবং শিয়া। এই যে ১২ কোটি মুসলমান নৃতাত্ত্বিকভাবে তারা আবার এক ভাষা, একই সংস্কৃতির মানুষ। এই জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে আপনি তিন কোটি মানুষ পাবেন যুদ্ধ করার জন্য এবং তিন কোটি মানুষকে যদি আপনি সামরিক প্রশিক্ষণ দেন এর বিরুদ্ধে কোনো বিচ্ছিন্নতাবদী আন্দোলন হবে না। আমরা স্বভাবিকভাবেই সামরিক বাহিনীর সম্পূরক শক্তি হতে পারি। যেটা ইন্ডিয়ার পক্ষে সম্ভব নয়। পাকিস্তানের পক্ষেও সম্ভব নয়। আজকে যদি ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গে দুই লক্ষ লোককে সামরিক ট্রেনিং দেয়। কালকে ভারতের অনেক অংশে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হবে। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা হবে না। কাজেই আমরা হলাম এমন জাতি পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। অর্থাৎ আমাদের বিজয় অর্জনের মূল শক্তি জনগণ।
নেসার : অর্থাৎ আপনি যে আর্মির শক্তির কথা বলছিলেন। শেষতক, যে কোনো যুদ্ধে বিজয় অর্জনের মৌলিক শক্তি, তাহলে দাঁড়াচ্ছে জনগণ।
ফজলুর রহমান : হ্যাঁ, জনগণ।
নেসার : আমার এবারের প্রশ্ন হলো বিডিআর বিদ্রোহের পরে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সময় নিতে দেখেছি। এবং এই সময় নেওয়া নিয়ে আমরা বেশ কিছু বির্তক হতে দেখেছি। অনেকে বলেছেন এধরণের সময় নেওয়া প্রয়োজন ছিল না। ২০ মিনিটে বিদ্রোহ দমন করা যেত। কেউ বলছেন তা ঠিক হত না। কারণ তা করতে গেলে ব্যাপক সংঘর্ষ ও রক্তপাত ঘটত। তো আমরা এই গোটা বিষয়টাকে কিভাবে দেখতে পারি?
ফজলুর রহমান: আমার অভিমতটা আমি বলি। আমি আগেও বলেছি এখন পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- আমি ডিজি বিডিআর ছিলাম। আমি সামরিক বাহিনীর ডিভিশন কমান্ড করেছি। প্রশ্ন হলো একটা সমস্যা হয়েছে। এবং দেশে একটা নির্বাচিত সরকার রয়েছে। সরকারের দায়িত্ব হলো সমস্যাটিকে রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা। কিন্তু প্রশ্ন হলো উপায়টা কী হবে? এটা কি সামরিক উপায় ব্যবহার করে করা হবে? নাকি বেসামরিক উপায় ব্যবহার করে করা হবে। নাকি কূটনীতিক উপায় ব্যবহার করা হবে। দুটোই কিন্তু আপনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার তখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সামরিক উপায় ব্যবহার না করে বেসামরিক উপায় ব্যবহার করা হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো বেসামরিক উপায়ের ব্যবহার কখন হবে? তার একটা সীমারেখা আছে। তারা একটা দুটা গুলি করে জানান দিয়েছে। আমরা অফিসারদের জিম্মি করেছি। আমাদের এই এই দাবি। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি পূরণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অফিসারদের ছাড়ব না। দরকার হলে আমরা আরো কঠোর হব। অফিসারদের মেরে দিব। তখন বেসামরিক উপায় ব্যবহার ঠিক হয়। কিন্তু আমরা দেখলাম যে পুরাপুরি বিদ্রোহ হয়ে গেছে। তারা হেলিকপ্টার লক্ষ করে গুলি করছে। তারা সামরিক বাহিনীর অফিসারদের গুলি করে মেরে ফেলে দিয়েছে। বাইরে জনগণকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুঁড়ছে। এক্ষেত্রে আমার মিলিটারিতে কাজের যে অভিজ্ঞতা তাতে বেসামরিক উপায় ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার যে সীমারেখা তা অনেক আগেই অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। আমি খবরের কাগজে যেটা পড়লাম কর্ণেল গুলজার ১১টা ২০ মিনিটে তার শেষ এসএমএস পাঠিয়েছে। এবং আপনাদের জানা দরকার একটা কোনো অংশ বিদ্রোহ করে, তারপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে। এবং সেটা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে দুইঘণ্টার মতো। আর কমান্ড প্রতিষ্ঠিত করতে সময় লাগে আরো বেশি। অর্থাৎ দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে তাদের কমান্ড প্রতিষ্ঠা করতে। কারণ তখন তো অফিসার নাই। ফলে একজন সোলজার অপর একজন সোলজারের কমান্ড কেন মানতে যাবে? ফলে ওই সময়ে কমান্ডের অধীনে সবাইকে আনতে গেলে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। দরবার শুরু হয়েছিল সকাল নয়টায়। আর শেষ খুনটা হয়েছে সাড়ে ১১টার দিকে। তো দুই ঘন্টা সময় ছিল হত্যাকাণ্ডের। সেখানে আর্মির একটা ইউনিটকে মুভ করিয়ে দেওয়ার জন্য ৪৫ মিনিট সময় লাগে কেবল। এবং ঢাকা সেনানিবাস থেকে রওনা করলে দেড় ঘণ্টার মধ্যে ওখানে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।
জহির : আচ্ছা আমি এখানে একটা সম্পূরক প্রশ্ন করি। আপনিও জানেন প্রধামন্ত্রী সংসদে যে ভাষণ দেন সেখানে বলেন, উনার সামরিক সচিব সেনাপ্রধানকে ফোন করেছিলেন। উনি বলেছিলেন দুইঘণ্টা সময় লাগবে, বিশেষত সৈন্য রওয়ানা করার জন্য। এর যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। আসলে ঘটনা কি?
ফজলুর রহমান : আমি তো এজন্য বললাম একটা ইউনিট তৈরি হয়ে মুভ করার জন্য ৪৫ মিনিট সময় লাগে। এটা স্বাভাবিক সময়।
জহির : ঠিক আছে। কিন্তু একটা টক শোতে মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, সাধারণভাবে ঢাকা সেনানিবাসের মধ্যে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে একটা ইউনিট সবসময়ই থাকে।
ফজলুর রহমান : আমি সেই ইউনিটের কথাই তো বলছি। ৪৬ বিগ্রেড তো এজন্যই তৈরি করা হয়েছে। যাতে তারা জরুরি মুহূর্তে উপস্থিত হতে পারে। তারা ওভাবেই তৈরি থাকে। তারা অন-ডিউটিতে থাকে। নির্দেশ পেলেই মুভ করবে। এখন কথা হলো যে, বিষয়টি সম্পূর্ণতই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এবং দেশে যেহেতু একটা বেসামরিক সরকার রয়েছে। নির্বাচিত সরকার, সিদ্ধান্তটা তারাই নিবে। কিন্তু তারা সামরিক উপায় ব্যবহার না করে বেসামরিক উপায় ব্যবহার করেছিলেন। দেখুন এটা একদমই আমার ব্যক্তিগত মত। আমি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছি না। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, বেসামরিক উপায় ব্যবহার করার যে সীমারেখাটা ছিল; তা অতিক্রম করে গিয়েছিল। আর ঘটনা ঘটার সাথে সাথে যদি সামরিক উপায় ব্যবহার করা যেতো, তাহলে সর্বোচ্চ আধাঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হত।
নেসার : ঠিক আছে। কিন্তু পিলখানার আশেপাশে ব্যাপক আবাসিক এলাকা রয়েছে। সামরিক উপায় ব্যবহার করা হলে যে ধরণের রক্তপাত ঘটার সম্ভাবনা ছিল; তাতে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ভিন্নও হতে পারত।
ফজলুর হরমান: না, ক্ষয়ক্ষতি তেমন হত না। ট্যাঙ্কের একটা শক ইফেক্ট আছে। ট্যাঙ্ক তো আমরা এমনে দেখি। কিন্তু ট্যাঙ্ক যখন আমাকে মারতে আসছে, তখন ওটার একটা ইফেক্ট আছে। যে বিডিআর জাওয়ান তার ডিজিকে মারতে গিয়ে ফিট হয়ে পড়ে গেছে। তার অস্ত্রে কোনো লাইভ এ্যামুনেশন ছিল না, ডামি এ্যামুনেশন ছিল। সাহস বৃদ্ধি করার জন্য। ঘটনা হলো ট্যাঙ্ক মুভ করে এলাকাটাকে যদি ৪-৫টা সেক্টরে ভাগ করে নিত। যেমন জাওয়ানদের আবাসস্থল, অফিসারদের আবাসস্থল, অফিসার পরিবারদের আবাসস্থল এবং দরবার হল। এভাবে এলাকাটাকে ৪-৫ ভাগে ভাগ করে নিয়ে শক ইফেক্ট নিয়ে মুভ করত তখন তার মোকাবেলা করা বিডিআরদের সম্ভব হতো না। কারণ ট্যাঙ্কে তো মেশিনগান রয়েছে এবং গোলা রয়েছে। ফায়ার শুরু হলে জাওয়ানরা তো বিল্ডিং এর মধ্যে ঢুকে যেত। এবং তারা ফায়ার করলে ওখানে গোলা নিপেক্ষ করলে তাদের প্রতিরোধ ভেঙে যেত। একইসঙ্গে উপর থেকে যদি হেলিকপ্টার থেকে মিসাইল ও মেশিনগান নিয়ে আক্রমণ চালাত। তাহলে, তারা দাঁড়াতে পারত না। হেলিকপ্টারের যে মেশিনগান ওটা খুবই শক্তিশালী। কোনো সোলজার বের হলেই তো ওকে থামিয়ে ফেলত। এতে আসলে খুববেশি হতাহত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। দুই-একটা সোলজার হয়ত মারা যেত। আর আপনারা বলছেন বাইরে বেসামরিক লোক মারা যেত। বাইরে হতাহত হবে কি করে। সবাই তো বিল্ডিং এর ভিতরে ঢুকে যেত। এবং ট্যাঙ্কের গোলাতো একটা নির্দিষ্ট লক্ষেই আঘাত হানে। এবং অনেকেই বলছেন যে, এই পদক্ষেপ নিতে গেলে সারা দেশেই গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ত। গৃহযুদ্ধের মূল শর্ত তো জনসমর্থন। বিডিআর কি খুব ভাল কাজ করেছে যে, জনসমর্থন পেয়ে যাবে? আর জনসমর্থন ছাড়া তারা প্রতিরোধ করবে কিভাবে? জনগণ কি বিদ্রোহকে সমর্থন করত?
জহির : সমর্থনের ব্যাপার অবশ্য বির্তকের বিষয়। তবে আপনি মনে করছেন যে, অপারেশন চালালে দ্রুততার সাথে সমস্যার সমাধান করা যেত।
নেসার : এখন ধরেন বিডিআর জাওয়ানরা নাকি তাদের ডিজি এবং তার স্ত্রী সম্পর্কে অনেক অভিযোগ উত্থাপন করে আসছিল। একইসাথে তাদের নাকি অনেক দাবিও ছিল। এছাড়া তাদের রেশনিংয়ে বৈষম্য, বেতনে বৈষম্য, তারপর ডাল-ভাত কর্মসূচিতে দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নাকি ক্ষোভ ছিল। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এসব বিষয় নিয়ে বিদ্রোহ ঘটে যেতে পারে। এ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি ?
ফজলুর রহমান : আসলে এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া খুব মুশকিল। আমি তো বলেছি যে, যত বড় উন্নত দেশ হোক না কেন সোলজার এবং অফিসারদের মধ্যে একটা বৈষম্য রয়েছে। এবং সব সমস্যার সামাধান কোনো কালেই হবে না। এবং আমি মনে করি বর্তমানে আর্মি, পুলিশ ও বিডিআর-এর যে খাবারটা দেওয়া হয়, সেটা কিন্তু একটা প্রয়োজনীয় ক্যালরি হিসাব করে দেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার আছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় না খাবার খারাপ হয়। কিন্তু সেটা নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে হবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
জহির : অভিযোগ তো প্রধানভাবে এসেছে ডাল-ভাত কর্মসূচির দুর্নীতি এবং তাদের প্রাপ্য নিয়ে।
ফজলুর রহমান : আমি তো এ প্রসঙ্গে আগেই বলেছি, যে এটা নিয়ে কোনো ঘটনা যদি ঘটে থাকে--তারা যদি ছুটি ছাটা কম পেয়ে থাকে, টাকা-পয়সা না পেয়ে থাকে, তাহলে, জিম্মি করা পর্যন্ত মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তাতে যেভাবে হত্যাকাণ্ড তারা ঘটিয়েছে তাতে মনে হয় না এই কারণগুলো মুখ্য।
নেসার : দেখুন অভিযোগ আরো রয়েছে। যেমন ধরুন একজন বিডিআর সোলজার তার নির্দিষ্ট পেশাদারিত্ব রয়েছে। কিন্তু আর্মি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসার এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা নাকি বিডিআর জাওয়ানদের দিয়ে পারিবারিক কাজ বা অপেশাদারী কাজ করিয়ে থাকেন। যা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এসম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
ফজলুর রহমান : না এটা ঠিক না। কারণ ব্যাটম্যান প্রথা তো তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের দিয়ে এভাবে অপেশাদারি কাজ করানো হবে কেন?
নেসার : এটা তো ঘটনার একটা দিক। কিন্তু আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ভিতরে যদি বারবার এধরণের বিদ্রোহ ঘটতে থাকে। এবং তার সাথে যদি বিদেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কথা ওঠে তাহলে, কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ ওই সব দূতাবাসকে বহিষ্কার করা কি দেশের জন্য ভাল নয় ?
ফজলুর রহমান : কারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত এটা যদি আমরা জানতে পারি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমরা হয়ত রাখি না। তারপরও যদি আমরা বিষয়টি জানি, আমাদের অনেক দিক থেকে লাভ হবে। আমরা নিজেরা সর্তক হতে পারব। হুশিয়ার হতে পারব। এবং ভবিষ্যত কর্মপন্থাগুলো আমরা নির্ধারণ করতে পারব।
নেসার : আর যদি বাইরের কারো এক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঘটেই থাকে। সেক্ষেত্রে সাধারণ বিডিআরদের তো আর ওই ধরণের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেই। বিপরীতে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর তো উচ্চপদস্থ অফিসারদের সাথেই যোগাযোগ রয়েছে। ফলে এবারের বিডিআর বিদ্রোহ ও আর্মি অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের সাথে আর্মির মধ্যেই অন্য কোনো গ্রুপ কি যুক্ত থাকতে পারে?
ফজলুর রহমান : আমার সেটা মনে হয় না। আসলে কারো সাথে যদি বিদেশী কোনো রাষ্ট্রের সেই ধরণের যোগাযোগ থাকে তাহলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে। এবং শাস্তি পেতে হবে।
নেসার : এটা হলো একটা দিক। আমার প্রশ্ন হলো মাধ্যম ছাড়া বিদেশী হস্তপেক্ষ কিভাবে ঘটবে?
ফজলুর রহমান : আর্মির মধ্যে এতবেশি ইন্টেলিজেন্স রয়েছে বিশেষত আর্মি অফিসারদের গার্ড করার জন্য এখানে এটা সম্ভব নয়। আর যদি তারা কেনা-বেচা হয় সেটা প্রমাণিত হয় তাকে যদি স্পাই হিসাবে ঘোষণা করা হয় তাহলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আর কারো যদি এধরণের যোগাযোগ থেকে থাকে, আমি জানি না। কিন্তু যদি ধরা যায় তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।
নেসার : দেখুন এটা ভিন্ন বিষয়। আমার প্রশ্ন হলো অন্য একটি রাষ্ট্র যদি খোদ সেনাবাহিনী বা বিডিআরে কর্মরতদের মধ্যে কোনো ধরণের মাধ্যম না পায়, তাহলে, কিভাবে এ ধরণের বিদ্রোহ ঘটানো সম্ভব? আর এই হত্যাকাণ্ডের সাথে শুধুই বিডিআর-এর জাওয়ানরাই যুক্ত নাকি আর্মির অফিসাররাও যুক্ত থাকতে পারে?
ফজলুর রহমান : আমি এটা বলতে পারব না। যারা তদন্ত করছেন তরাই এটা বলতে পারবেন।
নেসার : আমার আর একটি প্রশ্ন রয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওই সময় ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিল তাদের ৭৮ জন অফিসার নিখোঁজ রয়েছে। তারপর হঠাৎ একদিনে সংখ্যাটা ৭ জনে নামিয়ে আনা হলো। এসম্পর্কে আপনার মতামত কি?
ফজলুর রহমান : এটা হতেই পারে। ওই সময় একটা ডামাডোল ছিল। অনেকে আত্মগোপনে ছিল। অনেকে বাইরে ছিল। মনে হয়েছিল অমুক এখানে আছে অথবা এখানে নাই। এসব মিলিয়ে এটা হতে পারে। অন্য কিছু নয়।
নেসার : আর একটি বিষয় হলো বিডিআর বিদ্রোহের পরে বিডিআর-এর অসংখ্য সাধারণ সৈনিকের সাথে আর্মি অফিসাররাও আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তদন্তের সময় আমরা পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে দেখছি-তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে শুধুমাত্র বিডিআর-এর সৈনিকদের। আর্মি অফিসারদের তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার সংবাদ কিন্তু আমরা সংবাদমাধ্যমে পাচ্ছি না। আমার প্রশ্ন হলো সেখানে দায়িত্বরত আর্মি অফিসাররা কি তদন্তের বাইরে থাকবেন?
ফজলুর রহমান : দেখুন আমি এটা ভাল বলতে পারব না তদন্তের টার্মস এবং রেফারেন্সের মধ্যে কি আছে। সেটা ধরেই তদন্ত হবে। তাছাড়া, তদন্ত চলাকালীন সময় আমি কোনো মন্তব্য করব না।
নেসার : তারপরেও ঘটনার সুরাহা হওয়ার জন্য উভয়কেই জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার নাকি শুধুমাত্র বিডিআর সদস্যদের মধ্যে তদন্ত হলেই চলবে।
ফজলুর রহমান : আমার মতে সবারই হওয়া উচিৎ। সময় হলে নিশ্চয়ই সবাইকে ডাকবে বলে মনে হয়।
নেসার : আমাদের আলাপচারিতার পর্ব আমাদের দিক থেকে শেষ করছি। সহযোগীতা দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফজলুর রহমান : আপনাদেরকে ধন্যবাদ।